স্টাফ রিপোটার্সঃ
জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব নয় ---মাওলানা আবুল কালাম আজাদবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, যে লক্ষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আগামীতে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা পুরোপুরি বিলুপ্তির পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও আইনসম্মতভাবে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরছি। জনগণ আমাদের গণমিছিলে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর দাবি জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্কে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে খুলনা মহানগরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সমাবেশ ও গণমিছিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন ।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা নায়েবে আমীর ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মহানগরী সেক্রেটারি ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর ও খুলনা-১ নং আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শেখ মো. আবু ই্উসুফ, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, জেলা সেক্রেটারি ইলিয়াস হোসাইন, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। অন্যান্যের মধ্যে খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, মহানগরী অফিস সেক্রেটারি মিম মিরাজ হোসাইন, এডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহিদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর আব্দুল্লাহ আল মামুন, হরিণটানা থানা আমীর আব্দুল গফুর, দৌলতপুর থানা আমীর মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মুনাওয়ার আনসারী, লবণচরা থানা আমীর মোজাফফর হোসেন, খুলনা সদর থানা সেক্রেটারি আব্দুস সালাম, সোনাডাঙ্গা থানা সেক্রেটারি মাওলানা জাহিদুর রহমান নাঈম, খালিশপুর থানা সেক্রেটারি আব্দুল আওয়াল, দৌলতপুর থানা সেক্রেটারি মাওলানা মহিউদ্দীন, আড়ংঘাটা থানা সেক্রেটারি শেখ মো. তুহিন, হরিণটানা থানা সেক্রেটারি এডভোকেট ব ম মনিরুল ইসলাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান ও কাজী মাহফুজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াতের ৫ দফা দাবিতে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ইতোমধ্যে এসব দাবিতে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও যুগপৎ কর্মসূচী পালন করছে। এরকম গণদাবি উপেক্ষা করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা পরিপন্থি। একটি দল ও তাদের সাথে থাকা ক্ষুদ্র কয়েকটি দল এসব দাবি উপেক্ষা করে যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরাও ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এর আগেই জাতি সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখতে চায়। অন্তবর্তী সরকারকে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ৫ দফা দাবীর গুরুত্ব উপলব্ধি করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, চব্বিশের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে ইতিবাচক রাজনৈতিক সুচনা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনের আগেই দেশে ফের পেশী শক্তির প্রদর্শন শুরু হয়েছে। যা দেশে পুরনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় নীল নকশার নির্বাচনের আয়োজনের ষড়যন্ত্র বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জাতির পক্ষ থেকে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
মাস্টার শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ জাতীয় পার্টি যদি শেখ হাসিনাকে সমর্থন না করতো তাহলে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ হয়ে উঠতে পারতো না। আওয়ামী লীগ যেমন অপরাধী তেমনি জাতীয় পার্টিও সমান অপরাধী। এই দেশকে ফ্যাসিবাদের কবলে পরিণত করার জন্য জাতীয় পার্টির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি নির্বাচনের আগে আমাদের ৫ দফা দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমরা একের পর এক তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন আয়োজন, উভয় কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, অন্তবর্তী সরকারকে জনগণের কাছে করা অঙ্গীকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কোন বিশেষ গোষ্ঠীর আঙ্গুলী হেলনে নির্বাচন অনুষ্ঠান বা সরকার পরিচালনা করলে চলবে না। সবকিছু করতে হবে জুলাই বিপ্লবের চেতনার আলোকে। তিনি অন্তবর্তী সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার আঁতাত করে ‘সেইফ এক্সিট’ নেওয়ার চেষ্টা করলে জনগণ বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে তা প্রতিহত করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেন্দ্র দখল, নমিনেশন কেনাবেচা ও কালো টাকা বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি বা গণভোটের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। সনাতনী পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতির নির্বাচন জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তিনি আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান।গণমিছিলটি নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে শুরু হয়ে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, ফেরীঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, সঙ্গিতা মোড় হয়ে শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার-প্লাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনতা অংশ নেয়।#
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন