কর্মস্থলে না গিয়েই স্বামী-স্ত্রীর বেতন ভাতা উত্তোলন; যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল - daily shadhinceta

এখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন

সংবাদ শিরোনাম

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

কর্মস্থলে না গিয়েই স্বামী-স্ত্রীর বেতন ভাতা উত্তোলন; যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

 



রিফাত আরেফিন 

যশোর টেকনিক্যাল এন্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে নজিরবিহীন অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন  অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম। ১৪ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়ে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। স্ত্রীকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে ঘরে বসে বেতন তুলেছেন। তাদের অনিয়ম দুর্নীতির পথ সহজ করতে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পালাক্রমে সভাপতি পদে বসিয়েছেন বোন ও ভগ্নিপতিকে। তারাই অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের দুর্নীতির সহযোগি হিসেবেই থেকেছেন। সম্প্রতি তাদের দুর্নীতির বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। আর অবস্থা বেগতিক দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘মডেল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট’র অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে গেছেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজটির অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম। তিনি একই সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে মডেল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে ১৪ বছর ধরে নিয়মিত কর্মরত থাকলেও যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজে যান না। কিন্তু মাস শেষে দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর সুস্পষ্ট লংঘন। এমপিও নীতিমালার ১১.১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।’ বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। শুধুই নিজেই অসম্ভবকে সম্ভব করেননি। ২০১০ সালে স্ত্রী নাসরিন পারভীন তানিয়াকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনিও হেঁটেছেন স্বামীর পথেই। ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে ১৩ বছর কর্মস্থলে না গিয়েও তুলেছেন নিয়মিত বেতন ভাতা। অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম তার অনিয়ম, দুর্নীতি ঢাকতে  প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বোন জাহিদা ইদরিস ও ভগ্নিপতি আরাফাত ইদরিসকে পর্যায়ক্রমে পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে বসিয়েছেন। কলেজে না এসেও বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা, সরকারি অংশের বেতন, বিল ও আনুষঙ্গিক বিল দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৬ই অক্টোবর অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা)। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বে পান কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ডিএম তবিবর রহমানকে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এর পর অভিযোগের প্রমাণ লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জাহিদুল ইসলাম। গত ১২ নভেম্বর ভোর ৫টা ৪৫ দিকে কলেজে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয়  ও গোপনীয় কাগজপত্র ব্যাগে ভর্তি করে নিয়ে গেছেন বলে থানায় জিডি করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

একাধিক শিক্ষক জানান, ‘এমপিওভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে তিনি শিক্ষকতা ও দায়িত্ব পালন করেন মডেল পলিটেকনিক ইন্সিটিউটে। ২০১০ সালের পর থেকে তিনি নিয়মিত এমপিওভুক্ত কলেজে আসেন। কলেজের প্রধান নিয়মিত কর্মস্থলে না আসায় কলেজটির কার্যক্রম খুড়িয়ে চলছে। কলেজের উন্নয়ন ফান্ড নেই। অভ্যন্তরীণ কোন কমিটি নেই। স্বামী অধ্যক্ষ ও স্ত্রী হিসাব সহকারী হওয়ায় ঘরে বসে তারা ইচ্ছা মত খরচের বিল উত্তোলন করেন। কলেজের বোন ও ভগ্নিপতি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পর্যায়ক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।'


তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের হিসাব সহকারী নাসরীন পারভীন তানিয়া দাবি করেছেন, কলেজের শিক্ষকরা ষড়যন্ত্র করছেন। তারা স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত কলেজে যান। হাজিরা খাতায় সাক্ষরও করা আছে।’

এ বিষয়ে যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে সহকর্মীরাই। আমি নিয়মিত কর্মস্থলে যাই।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি মডেল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। আমি সেখানকার অধ্যক্ষ নই, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে আছি। এজন্য সেখানে যাতায়াত আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here