রতন টাটা: স্কুলের লাজুক ছেলেটি হয়ে গেলেন প্রখ্যাত শিল্পপতি বিবিসি আপডেট: - daily shadhinceta

এখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিন

সংবাদ শিরোনাম

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

রতন টাটা: স্কুলের লাজুক ছেলেটি হয়ে গেলেন প্রখ্যাত শিল্পপতি বিবিসি আপডেট:

 

রতন টাটা। মুম্বাইতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৪




















‘লবণ থেকে সফটওয়্যার’—কী নেই টাটা গ্রুপের শিল্পে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই টাটা গ্রুপকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রতন টাটা। এই গ্রুপের রয়েছে শতাধিক কোম্পানি। কর্মী ৬ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। শিল্পগোষ্ঠীটির বার্ষিক রাজস্ব আয় ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি।

ভারতের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পপতিদের একজন ছিলেন রতন টাটা। তিনি দেশটির অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান ছিলেন। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

১৫৫ বছরের পুরোনো টাটা শিল্পগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামশেদজি টাটা। ভারতের শিল্পের পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁকে। বর্তমানে ইস্পাত থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, উড়োজাহাজ থেকে লবণের মতো খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে।

রতন টাটা ছিলেন লাইসেন্সধারী পাইলট। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ২০০৭ সালে এফ-১৬ ফ্যালকন মডেলের ফাইটার জেট চালান
রতন টাটা ছিলেন লাইসেন্সধারী পাইলট। তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ২০০৭ সালে এফ-১৬ ফ্যালকন মডেলের ফাইটার জেট চালান
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

পিটার ক্যাসির ‘দ্য স্টোরি অব টাটা’ নামের বইয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির নীতি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলা হয়, পুঁজিবাদকে পরোপকারের সঙ্গে যুক্ত করে এমনভাবে ব্যবসা করাই তাদের উদ্দেশ্য, যাতে অন্যদের জীবনমান আরও ভালো হয়।

রতন নেভাল টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা ছিলেন পারসি পরিবারের। তাঁর বাবার নাম নেভাল টাটা, মায়ের নাম সুনি টাটা। উচ্চশিক্ষিত ও সমৃদ্ধ এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ব্রিটিশ আমলে ইরান থেকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৪০ সালে রতন টাটার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়।  ঠাকুমা লেডি নাভাজ বাইয়ের কাছেই বড় হন রতন টাটা।

টাটা কোম্পানির ওয়েবসাইটে বলা হয়, স্কুলজীবনের শেষ তিন বছর রতন টাটা মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন ও ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে পড়েছেন। স্কুলে তিনি বেশ লাজুক ছিলেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেতেন।

স্কুল ও কলেজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন রতন টাটা। সাত বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় গাড়ি ও উড়োজাহাজ চালানো শেখেন রতন টাটা।

মা–বাবার বিচ্ছেদের পর থেকে রতন টাটা ও তাঁর ছোট ভাই জিমি টাটা বড় হন তাঁর দাদির কাছে
মা–বাবার বিচ্ছেদের পর থেকে রতন টাটা ও তাঁর ছোট ভাই জিমি টাটা বড় হন তাঁর দাদির কাছে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

যুক্তরাষ্ট্র তাঁর এতটাই ভালো লেগেছিল যে তিনি সেখানেই স্থায়ী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থ ঠাকুমা লেডি নাভাজ বাইয়ের ডাকে তাঁকে ফিরতে হয়। নাভাজ বাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে ১৯৬২ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। এই সময়ে জে আর ডি টাটা তাঁকে টাটা শিল্পগোষ্ঠীতে যোগ দিতে বলেন।  স্বজন জে আর ডি টাটাকে গুরু মানতেন রতন টাটা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, জে আর ডি টাটা তাঁর কাছে বাবা ও ভাইয়ের মতো।

টাটা শিল্পগোষ্ঠীতে যোগদানের পর হাতে-কলমে কাজ শেখার জন্য রতন টাকাকে ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরে নিজেদের ইস্পাতের কারখানায় পাঠানো হয়। তিনি সেখানে কয়েক বছর কাজ শেখেন। সেখানে ব্যবস্থাপকের প্রযুক্তিবিষয়ক সহকারীর দায়িত্ব পান। সত্তরের দশকের শুরুতে তিনি টাটার রেডিও, টেলিভিশন ও অন্যান্য টেক্সটাইলের দায়িত্ব পান।

অর্ধশতক ধরে টাটা গ্রুপকে নেতৃত্ব দেন জে আর ডি টাটা। ১৯৯১ সালে তিনি রতন টাটাকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ দেন। সে সময়ে অনেকেই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই দায়িত্বে আসতে পারতেন। তাঁদের বাদ দিয়ে রতন টাটাকে উত্তরসূরি করায় সে সময় কিছুটা সমালোচনাও হয়েছিল। তবে জে আর ডি টাটার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, রতন টাটা প্রমাণ করেন তাঁর কাজে।

আরও পড়ুন
বিভিন্ন সময় রতন টাটাকে খেলতে দেখা যেত কুকুরদের সঙ্গে। রতন টাটার ইনস্টাগ্রামে তাঁর চেয়ে কুকুরের ছবির সংখ্যাই বেশি!
বিভিন্ন সময় রতন টাটাকে খেলতে দেখা যেত কুকুরদের সঙ্গে। রতন টাটার ইনস্টাগ্রামে তাঁর চেয়ে কুকুরের ছবির সংখ্যাই বেশি!
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

রতন টাটা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে টাটা গ্রুপ সফলতার শিখরে পৌঁছায়। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি অ্যাংলো-ডাচ ইস্পাত প্রস্তুতকারী কোম্পানি ‘কোরাস’ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভারের অধিগ্রহণ করে। এ দুটি সিদ্ধান্তের জন্য তিনি বেশ প্রশংসিত হন। ২০০০ সালে আরেক সফলতার মুখ দেখে টাটা গ্রুপ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা কোম্পানি টেটলি নিয়ে আসে টাটা। তবে সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও ছিল। টেলিকম খাত ব্যর্থ হওয়ায় টাটা গ্রুপ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

২০০৯ সালে রতন টাটার কম দামে ন্যানো গাড়ি প্রস্তুত করার প্রকল্পটিও ব্যর্থ হয়। এক লাখ রুপিতে মধ্যবিত্তের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিজের জীবনের অন্যতম বড় ভুল বলে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here